একটি গতানুগতিক সাবলীল প্রেমের গল্প

 

একটা ছোট গ্রামে একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল ইলা। তার বয়স ছিল ২০ বছর। তারা গরীব ছিল কিন্তু তারা সুখী ছিল। তারা একটা কুঁড়ে ঘরে বাস করতো এবং তারা পরিবারের একে অপরকে খুব ভালবাসতো। তার বাবা অনেক কষ্টে তাকে একটা ডিগ্রী কলেজে ভর্তি করে দেয়। সে ডিগ্রী ১ম বর্ষের ছাত্রী ছিল। সে গল্পের বই পড়তে খুব ভালবাসতো। সে সব সময় একটা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো। একদিন সে তাদের গ্রামের হাটে বাজার করতে গিয়েছিলো। সেখানে তার জয় নামের একজন সুদর্শন যুবকের সাথে দেখা হয়। জয় গ্রামের এক বড়লোকের ছেলে ছিল। তার বাবা বলা যায় গ্রামের একজন জমিদারই ছিলেন। বাজার করতে করতে ও কথা বলতে বলতে তাদের পরিচয় হয়। এরপর তাদের সাথে নিয়মিত দেখা হতে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাদের সাথে কখনো কোনো খোলা মাঠে আবার কখনো কোনো নদীর ধারে দেখা হতে থাকে। একে অপরের সাথে অনেক ধরণের গল্প হয়, অনেক হাসি, ঠাট্টা হতে থাকে। জয় তার স্বপ্নের কথাগুলো ইলাকে আবার ইলা তার ভবিষ্যত নিয়ে কল্পনা জয়কে বলে। এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব দিনের পর দিন এগোতে থাকে। এরপর একদিন জয় তার মনের অভিব্যাক্তি ইলাকে বলে। সে বলে, ‘ইলা, তোমার আপত্তি না থাকলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই'। এতদিনে ইলাও জয়ের প্রতি মানসিকভাবে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে ইলা এক বাক্যে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। তারা একসাথে তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু, সমস্যাটা হলো জয়ের পরিবার ইলাকে পছন্দ করেনি। এর কারণ মূলত, ইলা একটা গরিব পরিবারের মেয়ে। জয়ের বাবা মা সরাসরিই তাকে বলে, ‘দেখো, এই বিয়ে সম্ভব না। কারণ ইলার পরিবারের অবস্থা আমাদের সমকক্ষ না।' প্রতি উত্তরে জয় বলে, ‘দেখো, আমি ইলাকে অসম্ভব ভালবাসি এবং সে অনেক ভাল মেয়ে। তার মন অনেক ভাল এটাই কি যথেষ্ট না? জীবনে অর্থই কি সব?’ জয়ের বাবা মা তার কোনো কথা শোনেনি। তারা সরাসরি জয়কে বলে দেয়, ‘দেখো, তুমি যদি ইলাকে বিয়ে করো। তবে তোমাকে এই বাড়ি ছাড়তে হবে।' ইলা যখন এই বিষয়টা জানতে পারে তখন সে অনেক কষ্ট পায়। সেও জয়কে অসম্ভব ভালবাসতো, তাকে হারাতেও চাইতো না। তবে তার কারণে জয়ের জীবনে কোনো সমস্যা হোক এটাও সে চাইতো না। সে জয়কে তাই বলেই বসলো, ‘দেখো, আমাদের বিয়ে না করাটাই হয়তো ভাল। আমি চাই না আমার কারণে তোমার জীবনে কোনো সমস্যা হোক।' জয় বলে, ‘ইলা, আমিও যেহেতু তোমাকে অসম্ভব ভালবাসি। তাই আমার পক্ষে তোমাকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না। চিন্তা কোরো না, কিছু একটা উপায় নিশ্চয়ই হবে।'

এভাবে দিনের পর দিন চলে যায়। জয় নিয়মিত তার বাবা মা কে রাজি করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, কিছুতেই তাদের রাজি করাতে পারে না। ইলার বাবা মাও জিনিসটা জানতে পারে। জেনে তারাও উদ্বিগ্ন হতে থাকে। ইলার মা তাকে বলে, ‘আমরাও তোকে অনেক ভালবাসি। আমরাও চাই তুই জীবনে সুখি হ। তবে আমাদের মনে হয় জয়ের পক্ষে তার বাবা মাকে রাজি করানো সম্ভব না। তাই তোর জয়কে ভুলে যাওয়াই মনে হয় ভালো।' ইলার এমন একটা রাত যায়নি যেখানে তার এসব ভেবে না কেঁদে গেছে। কিন্তু সে জয়কে এতটাই ভালবাসে যে জয় আঘাত পাবে মায়ের কথা মানতেও পারছিলো না। অবশেষে, ইলা একদিন জয়ের সাথে দেখা করতে চাইলো। দেখা করে সে মনকে শক্ত করে জয়কে বললো, ‘জয়, আমি তোমাকে অসম্ভব ভালবাসি। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের বিয়ে করে একসাথে সংসার করা হবে না। তোমার বাবা মা আমাকে কখনই গ্রহন করবেন না। আর আমি চাই না আমার কারণে তোমার জীবনটা আর কঠিন হোক।' এটা শুনে জয়ের হৃদয়টা ভেঙ্গে যায় ঠিকই কিন্তু সে বলে, ‘আমি তোমাকে অসম্ভব ভালবাসি এটা তুমি জানো। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি। আমি দুরে থাকলেও আজীবন তোমাকে ভালবাসব।' তারা আসলে এরই মধ্যে বুঝে গিয়েছিলো তাদের দুইজনের একে অপরের প্রতি ভালবাসা দৃঢ় হলেও এ নির্মম পৃথিবী তাদের এই ভালবাসাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তারা কোনোদিন এক হতে পারবে না জেনে সারাজীবন বন্ধু হয়ে একে অপরের পাশে থাকার অংগীকার করে। এরপর তারা তাদের পারিবারিক জীবনে মনোনিবেশ করে।

এভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। কিন্তু কেউ কাউকে এতটুকুও ভুলতে পারে না। তবে তারা এর মধ্যে এটুকু বুঝে যায়, পৃথিবীতে ভালবাসাই সবকিছু না। তবে তারা নিজেরাই প্রতিজ্ঞা করে জীবনে যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন তারা কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না।

একদিন, ইলার বাবা হঠাত খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ইলা এতে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। সে তার বাবার সেবা করতে থাকে এবং উপরওয়ালার কাছে তার বাবার সুস্থতা কামনা করতে থাকে। জয় এটা জানতে পারে ও ইলার পাশে থাকতে চায়। সে ইলার বাড়িতে যেয়ে ইলাকে বলে, ‘তুমি একদম চিন্তা কোরো না। আমি তোমার পাশে আছি।' ইলা বলে, ‘তুমি যে পাশে আছো এতেই আমি শক্তি পাই।' যখনি প্রয়োজন হোতো জয় খাবার, ঔষধ নিয়ে যেতো। আস্তে আস্তে ইলার বাবা সুস্থ হয়ে ওঠে। জয় যে সবসময় তাদের পাশে ছিল এতে ইলার বাবা মা খুব খুশি হয়। ইলা জয়কে বলে, ‘তুমি না থাকলে আমি একা যে কি করতাম!’ জয় বলে, ‘আমি তো বলেইছি আমি সারাজীবন তোমার পাশে আছি।' এরপর থেকে যদিও তারা জানতো যে তাদের এ স্বম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নাই, তারপরেও তারা একে অপরের সাথে সময় কাটানো, দেখা করা বাড়িয়ে দেয়।

এরপর একদিন, জয়কে বাবার ব্যবসার কাজে কিছুদিনের জন্য শহরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়ে বসে। সে ইলাকে সব খুলে বলে শহরে যাওয়ার ব্যাপারে। সে কথা দেয় সে যে কয়দিন শহরে থাকবে নিয়মিত ইলার সাথে যোগাযোগ রাখবে। ইলার ভেতরে ভেতরে কষ্ট হলেও সে মেনে নেয় বিষয়টা। ইলা বলে, 'আমার তোমাকে অনেক মনে পড়বে। নিজের খেয়াল রেখো।' জয় বলে, ‘আমারও তোমাকে অনেক মনে পড়বে। আমি দ্রুতই ফিরে আসব।'

জয় শহরে যাওয়ার পর ইলার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। তারা তদের শহুরে জীবন আর গ্রাম্য জীবনে নিয়মিত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একে অপরকে জানাতো। এরই সাথে একে অপরের প্রতি সৃষ্ট অনুভুতিগুলোও তারা একে অপরকে জানাতে ভুলতো না।

এভাবেও, সময় কেটে যেতে লাগলো। জয় একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠলো। পরিবারের প্রতি দ্বায়িত্ব-কর্তব্যের পাশাপাশি ইলার প্রতি দ্বায়িত্ব-কর্তব্যও সে পালন করে গেলো। ইলা তাকে হয়তো পাশে পাইনি। তবে জয়ের সাফল্যে সে খুব খুশি হোলো।

একদিন জয় গ্রামে ফিরলো। গাড়ি থেকে নেমেই সে ছুটে গেলো ইলার বাড়ি। ইলার বাড়ি এসে ইলাকে ডাক দিতেই ইলা ঘর থেকে বেরিয়ে খুশিতে থমকে গেলো। তার ভিতরের আনন্দ তার মুখে প্রতিফলিত হচ্ছিলো। তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নদীর পারে বসে কথা বলছিলো। কথার একটা পর্যায়ে, জয় ইলাকে এবার সোজাসাপ্টা বলে বসলো, ‘আমার তোমাকে ছাড়া আর একটা মুহুর্তও থাকা সম্ভব না। আমি এবার তোমাকে বিয়ে করতে চাই।' কিন্তু এতে ইলার মুখে চিন্তার ছাপ দেখা গেল। সে জয়কে বললো, ‘তোমার বাবা মা আমাকে কখনোই মেনে নেবে না।' জয় বললো, ‘আমি এতদিন ব্যবসা করে টাকা সঞ্চয় করেছি। যদি বাড়ি থেকে মেনে না নেয়। তবে আমরা দুজনে দুরে কোথাও গিয়ে সংসার করব।' ইলা বললো, ‘এটা হয় না, জয়। আমার কারণে তুমি তোমার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারব না।' জয় বলে, ‘আর আমি তোমাকে ছাড়া যে কষ্টে থাকব। সেটার কি হবে?’ ইলা সব শুনে আর জয়কে এড়াতে পারেনি। ইলা ও জয় এরপর ইলার বাবা মাকে সব বুঝিয়ে বলে। প্রথমে তাদের আপত্তি থাকে। ইলা আর জয়ের সিদ্ধান্ত যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে এটা বুঝে তারা আর আপত্তি করেনি। জয় আর ইলা তাদের কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে কোর্টে বিয়েটা সেরে ফেলে। বিয়ের পর ইলাকে জয় বাড়ি নিয়ে গেলে কাংখিত ঘটনাই ঘটলো। জয়ের বাবা মা জয় ও ইলাকে মেনে নিলো না। ঐ অবস্থায়ই জয় ইলাকে নিয়ে শহরে চলে এলো। জয় আর ইলা জয়ের সঞ্চিত অর্থ দিয়েই ছোট একটা ব্যবসা শুরু করলো। তাদের দুইজনের ভালবাসার প্রতি এতটাই আস্থা ছিলো যে, তারা জানতো যে যত প্রতিকুল পরিবেশই আসুক না কেন তারা পারবে।

এরপর বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। তাদের পরিবারের সদস্য বাড়লো। এতকিছুর মধ্যেও তারা তাদের খারাপ সময় ভুলে গেলো না। তারা বুঝতে পেরেছিলো, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা অটুট থাকলে যেকোনো প্রতিকুল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। এভাবে সময় অতিবাহিত হতে হতে যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে গেলো তারা তাদের নাতিপুতিকে নিজেদের ভালবাসার গল্প বলে ভালবাসা ও বিশ্বাসের গুরুত্ব শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো।



প্রোডাক্টের নামঃ- লেডিস উইন্টার জিন্স জ্যাকেট

প্রোডাক্টের মূল্যঃ- ৮৬০ টাকা (ঢাকার ভিতরে) ৯৩০ টাকা (ঢাকার বাইরে) ডেলিভারি চার্জ সহ

ক্যাশ অন ডেলিভারি।

যোগাযোগঃ- ফেসবুক পেজ লিংক




বইটি কিনতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে ভালবাসে

  আমার নাম সাদিকা। আমি আমার গল্পটা সবাইকে বলতে চাই। এটা মূলত একটা ভালবাসা , ভুল আর আশার গল্প। আমি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। আমি বেশি কথা বলি...