যদি এমন হোতো যে, যেদিন থেকে আভা মাহিরকে আর দেখতে চাচ্ছিলাম না। তারপরের দিন থেকে ওর সাথে দেখা না হওয়ায় আভার খুব মন খারাপ হচ্ছে। তারপরেও মস্তিষ্ক বলছে, আভা যা করছে ঠিকই করছি। কিন্তু সবকিছু নিয়ে ভাবার জন্য আভার সময়েরও প্রয়োজন ছিল। আভা তার কলিগ আর হস্পিটালের কাজে বেশি মনোনিবেশ করলো। সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।
একদিন বিকেলে আভার ডিউটি শেষ হলো। সে ভাবলো, আজ বাসে না গিয়ে বাসায় হেঁটে হেঁটে যাবে। অন্তত যতদুর যাওয়া যায়। বিকেলটা খুব সুন্দর ছিল। তার এই সুন্দর বিকেলটা কিছুক্ষণের জন্য উপভোগ করার ইচ্ছেও ছিল। কিছুদুর হাটতে হাটতে তার হঠাৎ মনে হোলো কেউ তাকে পিছন থেকে ডাকছে। মনে হলো কন্ঠস্বরটা পরিচিত। তাই আমি পিছন ফিরে দেখি আমার কলেজের এক বন্ধু। তার নাম দারুল। আভার সাথে দারুলের বহুদিন কোনো যোগাযোগ নাই। আভা তাকে দেখে খুব খুশি হয়েই বললো, ‘ও বাবা! এ দেখি দারুল। কেমন আছো তুমি?’ দারুল বললো, ‘কেমন আছি, ভাল আছি পরে হবে আগে চলো কোথাও গিয়ে বসি। কিছু খেতে খেতে দুই বন্ধুর এতদিনের জমানো সব কথা বলা যাবে।' আভাও রাজি হয়ে গেল। ঐদিন তাদের অনেকক্ষণ আড্ডা হোলো। তারা দুইজন দুইজনের ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া করলো। আভা ওর ঠিকানা নিলো, দারুলকেও আভা তার নিজের ঠিকানা দিলো।
এরপর থেকে দারুলের সাথে আভার নিয়মিত যোগাযোগ হতে লাগলো। দারুল, আভার খুব কাছের বন্ধু ছিলো। কলেজ জীবনে দারুল, আভার খুব খেয়াল রাখতো। দারুল, আভাকে খুব ভাল বুঝতো। আভারও কলেজ জীবনে দারুলের সাথে সময় কাটাতে খুব ভালো লাগতো। দারুলের সাথে আভার নতুন করে এই যোগাযোগ আভার মন থেকে মাহিরকে সরিয়ে দিতে শুরু করলো।
এরপর থেকে দারুল আর আভা নিয়মিত দেখা করা আরো বাড়িয়ে দিলো। তাদের একসাথে সময় কাটানোর পরিমানও বাড়তে শুরু করলো। দারুল খুব মজার একটা ছেলে ছিল। সে সবাইকে হাসি খুশি দেখতে বেশি ভালবাসতো। তাই সে এমনভাবে কথা বলতো যে সে কথা বললে কেউ না হেসে পারতো না। কেউ যে দারুলের সামনে মন খারাপ করে থাকবে এমনটা হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। সেখানে আভা তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু ছিল সে কোনো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে থাকবে এটা দারুল একদম নিতে পারতো না। সেই কলেজের ব্যবহারটাই দারুল, আভাকে দিতে শুরু করলো। ফলে আভার মাহিরের জন্য মন খারাপ করে থাকার কোনো সুযোগই ছিল না। এভাবে আভা আর দারুলের নতুন এই বন্ধুত্বের বয়স প্রায় ১ বছর হয়ে গেলো। সবকিছু ভালই চলছিলো।
আভা আগাগোড়া দারুলকে খুব বিশ্বাস করতো। হঠাৎ এমন একটা ঘটনা ঘটলো যা আভার মনে একটা প্রশ্ন জাগালো। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আভার শিফট আগে আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সে চেয়েছিলো প্রায়ই দারুল আর সে কফি খেতো সেখানে দারুল আসার আগে গিয়ে দারুলের জন্য অপেক্ষা করে দারুলকে চমকে দেবে। আভা যা ভেবেছিলো তেমনটা হয়নি। আভা সেখানে পৌঁছে দেখলো দারুল সেখানে আগে থেকেই একটা মহিলার সাথে কথা বলছে। আর এটা রেস্টুরেন্টে ঢোকার গেটে দাঁড়িয় দেখেই কেন যেন আভার মনটা ভেংগে গেল। তারা দুইজন খুব হাসাহাসি করে কথা বলছে। আভা দুর থেকেই ভাবতে লাগলো, এটা কি দারুলের গার্লফ্রেন্ড? তার কি তাদের কাছে যাওয়া উচিত? যদি গার্লফ্রেন্ডই হয় তাহলে দারুল তাকে আগে থেকেই এটা কেন বলেনি? তার কি ঐ অবস্থায়ই ওখান থেকে না দেখার ভান করে চলে যাওয়া উচিত? আসলে, আভা বুঝতেই পারছিলো না তার কি করা উচিত। এসব ভাবতে ভাবতেই কেন যেন আভার শরীর ছেড়ে দিচ্ছিলো। আভা ঐ অবস্থাতেই ওখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো এবং চলেও গেলো।
ঐ রাতে এসব চিন্তা করতে করতে আভা একটুও ঘুমাতে পারলো না। পরের সকাল না ঘুমানোর ফলে তার অবস্থা বিধ্বস্ত প্রায়। সে সিদ্ধান্ত নিলো সে এসব নিয়ে আর ভাববে না। কারণ সে যেসব জিনিস নিয়ে ভাবছে তার ধারণা ভুলও হতে পারে। ঐদিনটা আভার অফ ডে ছিল। ঐদিন বিকেলে দারুল তাকে ফোন দিলো। তার গলার স্বরে সে খুব উৎফুল্ল বোঝাই যাচ্ছিলো। দারুল উৎফুল্ল স্বরেই আভাকে বললো, ‘আভা আজ তোমার অফ ডে বলেছিলে না? চলো কোথাও ঘুরতে যাই।' আভার যদিও যা দেখেছে আগের দিন তাতে সংশয় ছিলো। তবুও আভা ভাবলো তার দেখা করা উচিত এবং যদি এই বিষয়টা নিয়ে কথা ওঠে তাহলে এসব নিয়ে কথা বলে সংশয় দুর করা উচিত। কথামত, আভা দারুলের সাথে ঐ রেস্টুরেন্টেই গেলো। সর্বদা দারুল যে ব্যবহার দেয় তাই দিচ্ছিলো। কিন্তু আভা কোনো কথায় মনোনিবেশ করতে পারছিলো না। তার মাথায় শুধু গত দিন যা দেখেছে তাইই ঘুরছিলো। এসবের মধ্যেই হঠাৎ আভা কাপা কাপা স্বরে দারুলকে বললো, ‘দারুল আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই।' দারুল বললো, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা?’ আভা বললো, ‘আমি কালকেও এখানে এসেছিলাম। তোমাকে একজন মহিলার সাথে খুব হাসাহাসি করে কথা বলতে দেখলাম। ভাবলাম তোমার গার্লফ্রেন্ড। তাই তোমাদের কাছে আসিনি।' দারুল অবাক হয়েই বললো, ‘আমাকে দেখেছিলে!’ আভা বললো, ‘হ্যাঁ এবং আমার কি করা উচিত বুঝতে না পেরে আমি চলে গিয়েছিলাম।' দারুল এটা শুনে চুপ করে গেল। আর তাতে আভার মনটা ভেঙ্গে যেতে শুরু করলো আগে মাহিরের ক্ষেত্রে যেভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। আবার দারুলের কাছ থেকেও তার এমন কিছু শুনতে হবে। আর এই ভয়টা আভার ভিতরটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। দারুল হঠাৎ জোরে হেসে উঠে বললো, ‘আরে ও তো আমার খালাতো বোন। ওর নাম ইভা। ও নতুন একটা চাকরী পেয়ে এখানে এসেছে। আর এ শহরে আমি ছাড়া ওর আপন বলে এই শহরে কেউ নেই। আম্মা বলে দিয়েছিলো ওর সাথে দেখা করতে। তাই ওর সাথে দেখা করে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না খোঁজ নিলাম। ঘুরলাম। ঘুরে শহরটা দেখালাম। যাতে ও স্বাভাবিক হতে পারে।' আভা কেমন যেন হাফ ছেড়ে বাচলো আর একটু রেগেই বলে উঠলো, ‘তাহলে তুমি জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই উত্তর দিলে না কেন? আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। চুপ করে ছিলে কেন?’ দারুল এবার আরো জোরে হেসে বললো, ‘তুমি আমাকে চেনো না? আমাকে তো তুমি কলেজ জীবন থেকেই দেখছো। আমি জাস্ট তোমার সাথে মজা করছিলাম।' আভা এবার হেসে বলে উঠলো, ‘পুরো বিব্রত করে দিয়েছিলে। আমি তোমাদের একসাথে এভাবে সময় কাটাতে দেখে কত কিছু ভেবে বসেছিলাম।' দারুল এবার আভার হাতটা ধরে বললো, ‘আভা, আমি আজ তোমাকে একটা কথা বলি? আমি জানি আমার নিরবতা তোমাকে বিব্রত না। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। সেই কলেজ জীবন থেকেই তুমি ছাড়া আমার জীবনে আর কেউই নাই।' এটা শুনে আভার ভিতরে একটা সমধুর বাতাস বয়ে গেলো। আর সে ভাবতে থাকলো কোনো কিছু পুরোটা না জেনেই সে কত কিছু ভাবতে থাকে জীবনের সব ধরণের ঘটনাতেই। সে বুঝলো দারুল আসলেই মাহিরের মত নয়। দারুলকে বিশ্বাস করা যায়।
একদিন আভা রাতে একসাথে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। তারা গতানুগতিক তাদের সবসময় যে রেস্টুরেন্টটায় যায় সেখানেই খেতে গেল। খেতে খেতে দারুল মজার ছলেই হঠাৎ আভাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তা তোমার আমার আগে কয়জনের সাথে রিলেশন ছিল, সেসব কিছু বলো।' প্রথমে আভা একটু ইতস্তত করছিলো দারুলকে মাহিরের কথা বলবে কি না এটা ভেবে। পরে সে সবকিছুই দারুলকে খুলে বললো। দারুল খুব মন দিয়ে আমার ঘটনাটা শুনলো। এবার সে আবার আমার হাতটা ধরে বললো, ‘খুব ভাল হয়েছে তুমি এটা আর চেপে রাখোনি। আমি জানি এই ঘটনাটা নিজের ভিতরে চেপে রাখাটা কতটা কষ্টের। তুমি ভেবো না। আমি আছি তো তোমার সাথে সারাজীবন।' এটা শুনে আভার ভিতরে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো। ঠিক ঐ মুহুর্তে আভা এটাও বুঝে গেলো জীবনে চলার জন্য সে একজন মানুষ পেয়েছে তার পাশে। সে বুঝতে পারলো মাহিরের মত মানুষকে প্রকৃতি তার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছে তার ভালর জন্যই। তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো।
আভা কখনো ভাবেনি যে তার জীবনে মাহিরের সাথে এতকিছু হওয়ার পরও সে দারুলের মত একটা মানুষ পাবে যে তাকে সত্যিকারের ভালবাসবে। তার খেয়াল রাখবে। তার জীবনে আরেকটা অধ্যায়ের শুরু হবে যার নাম দারুল। জীবন সবসময় আমাদের সারপ্রাইজ দেয়। কখনো কখনো আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত খারাপ ঘটনাই আমাদের ভালর দিকে নিয়ে যায়।
বইটি কিনতে চাইলে এই এই লিংকে ক্লিক করুন
\
ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট রাইটার প্রয়োজন হলে এই ফেসবুক প্রোফাইলের লিংকে যোগাযোগ করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন