আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে ভালবাসে

 

আমার নাম সাদিকা। আমি আমার গল্পটা সবাইকে বলতে চাই। এটা মূলত একটা ভালবাসা, ভুল আর আশার গল্প। আমি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। আমি বেশি কথা বলি না। তাই আমার তেমন একটা বন্ধুত্ব হয় না কারো সাথে। আমি খুব রক্ষণাত্মক পরিবারের মেয়ে। তাই আমি তেমন একটা বাইরে যেতাম না। আমারও ইচ্ছে করতে অন্য সবার মত বাইরে ঘোরাঘুরি করতে। কিন্তু বাবা, মা রক্ষণাত্মক হওয়ায় আমার সুযোগ হয়নি কখনো। আমার কলেজ জীবনেও এই কারণে বন্ধুত্ব তো দুরের কথা কারো সাথে কথাই বলতে পারতাম নাম। তবুও আমার ২ জন বন্ধু ছিল। আমার বন্ধুত্বের পরিসীমা এই ২-৩ জনেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমার খেলাধুলা, নাচ-গান, ড্রয়িং এসব কিছুর প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। কিন্তু আমার বাবা, মা পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু করতে দিতে রাজি হতেন না।

একদিন কলেজে আমার ক্লাসের একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। তার নাম ছিল রায়িদ। তার সাথে ১-২ দিন মিশে বুঝতে পারলাম সে খুব মজার ছেলে। তার কথায় আমার ২ জন বন্ধুর সার্কেল ৩ জনে পরিণত হয়। সে কথা বললে আমি আর বান্ধবি আলিয়া খালি হাসতাম। খুব মজা পেতাম রায়িদের কথায় আমরা। আলিয়া কখনো কলেজে না আসলে বা কোনো কাজে ব্যাস্ত থাকলে রায়িদই আমাকে সময় দিতো, গল্প করতো।

একদিন রায়িদ কথা বলতে বলতে আমাকে বলে বসলো, ‘সাদিকা, তুমি কি জানো তুমি অনেক সুন্দর। আর তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে।' আমি এটা শুনে একটু লজ্জা মাখানো আনন্দই পেলাম। কারণ এর আগে কখনো কারো মুখ থেকে নিজের স্বম্পর্কে এভাবে শোনার সুযোগ হয়নি।

রায়িদের বাবা শিল্পপতি ছিলেন। বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে। আমার পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত। তাই আমার স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা করে ভাল একটা চাকরী করে বাবা, মায়ের পাশে দাঁড়াবো। আমার স্বপ্নের কথা যখনি রায়িদকে বলতাম, সে মজা করে বলতো কি না জানি না কিন্তু সে বলতো, ‘তুমি এত পড়াশুনাই বা কেন করবা আর চাকরিই বা কেন করবা। আমাকে বিয়ে করে নিলে তো তোমার এসব কিছু করাই লাগবে না।' আমার বয়স তখন ২০ হবে। সুতরাং বয়সের কারণে কি না জানি না, আমি রায়িদের এসব কথায় রায়িদের প্রতি প্রবল দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলাম। এটাও সত্যি, আস্তে আস্তে রায়িদই আমাকে আলিয়ার থেকে বেশি সময় দিতে লাগলো। আমার খুব খেয়াল রাখতে লাগলো রায়িদ। তাই সবকিছু মিলায়ে আমি রায়িদের প্রতি দুর্বল হতে লাগলাম। এক পর্যায়ে, সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলে আমি তাতে রাজি হয়ে যাই। সে আমার বাড়ি তার বাবা, মাকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠায়। আমার বাবা, মা রায়িদ ও তার পরিবার স্বম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে রাজি হয়ে যায় এবং সামাজিকভাবে সুন্দর বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের ৮ বছরের মাথায় আমাদের ঘর আলো করে একটা মেয়ে আসে। আমি আর রায়িদ ভালবেসে তার নাম রাখি লাবিবা।

আমাদের সংসারে ১ম দিকে সব ভালই চলছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তে রায়িদের ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সে সবসময়, আমার এটা ভাল লাগে না ওটা ভাল লাগে না বলে খোঁটা দিতে শুরু করে। এমনকি রায়িদ আমার একমাত্র বান্ধবি আলিয়ার সাথে দেখা করা, যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। আমার কাজই ছিল দিনরাত আমার মেয়ে লাবিবার সাথে সময় কাটানো। আমার ঘরের বাইরে বেরোনো এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। রায়িদ আস্তে আস্তে রাত করে বাসায় ফেরা শুরু করে। আমার খুব রায়িদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু সুযোগই হোতো না। কিছু জিজ্ঞেস করলে রায়িদ কোনো উত্তরই দিতো না। বাসায় এসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। সকালে উঠেই খেয়ে বাবার অফিসে। রায়িদের কারণে আমারও অনার্স কমপ্লিট করা হোলো না। আর ও নিজেও করলো না।

একদিন রাতে ঘরে উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলেই বসলো, ‘তুমি স্ত্রী হিসেবে মোটেই ভাল না।' এটা শুনে আমার এতটাই কষ্ট লাগলো যে আমি কেঁদেই ফেললাম। এরপর একদিন তো রায়িদ তো আমার গায়েই হাত তুলে বসলো। আমি বিষয়টা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি সারারাত কেঁদেছিলাম। আমি আমার বাবা, মাকে জানালাম যে আমি ডিভোর্স চাই। কিন্তু তারা সমাজ, সামাজিকতা ও লাবিবার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই হয়তো রাজি হোলো না। আমারও কিছু করার ছিল না। আমিও নিজেকে স্বান্তনা দিতে লাগলাম সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবে। আমাদের বিয়ের বয়স যখন ১০ বছর হয়ে গেল। তারপর কিছুটা ভাল হতে লাগলো। এভাবে আমাদের বিয়ের.১২ বছরের মাথায় আমি আবার প্রেগন্যান্ট হোলাম। এবার আমাদের পুত্র সন্তান হোলো। আমরা তার নাম রাখলাম জাবির। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আমি যতদিন হাসপাতালে ছিলাম রায়িদ একটাবারও আমার খোঁজ নেয়নি। এমনকি আমাকে যখন হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হোলো রায়িদ আমার সাথে একটাবারও ভাল করে কথা বলেনি।

এর মধ্যেই রায়িদ আমাকে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আমাকে দেয়। সে একদিন আবার উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে বসলো তার নাকি নতুন একটা মেয়ের সাথে স্বম্পর্ক হয়েছে। যে রায়িদকে আমার চেয়েও বেশি ভালবাসে। এটা শোনার পর আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে এটা নিশ্চয়ই আপনাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমার মনে হতে লাগলো তৎক্ষণাৎ আমি রায়িদকে ডিভোর্স দিয়ে লাবিবা আর জাবিরিকে নিয়ে বেরিয়ে যাই। কিন্তু কোথায় যাব, কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাবা, মাকে জানালে তারা নিশ্চয়ই আমারই ত্রুটি খুঁজে বের করবে।

এরপর একদিন জাবির ও লাবিবাকে আমার কাছে রেখে ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যায়। বলে রাখা ভাল, এর মধ্যে আমাদের দাম্পত্য জীবনের ১৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এবং আমার বাবাও এর মধ্যে মারা গেছেন। বিদেশ গিয়ে এক মাসের মাথায় রায়িদ কল দিয়ে বললো যে সে বিয়ের পর যে মেয়েটার সাথে স্বম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো। তাকে সে সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলো এবং তারা একসাথে ওখানেই থাকবে। বারবার বলব না এসব শুনে আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে। আপনারাই বুঝে নেন। আমি এইসব বিষয় কিছুই আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়িকে জানালাম না। ধৈর্য ধরে বসে থাকলাম আর আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। হয়তো আল্লাহ আমার ডাকও শুনলো। বিদেশ যাওয়ার ৩ মাসের মাথায় রায়িদ ফোন দিয়ে বললো, ‘তোমাকে ছেড়ে আসা আমার ভুল ছিল। আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও, প্লিজ।' আমি এত কিছু না ভেবেই বললাম, ‘আমি তো তোমার জন্য সবসময়ই ছিলাম। তুমি চলে আসো।' এই কথাটা বলার পরে ঐদিনই আমি প্রথম বুঝতে পারলাম আমি রায়িদকে আসলে কতটা ভালবাসতে পারি যে এতকিছুর পরেও রায়িদকে এটা বলতে পারি।

রায়িদ ফিরে আসার পর আমরা আবার নতুন করে শুরু করলাম। এভাবে আমরা ১৬ বছর কাটিয়ে ফেললাম। আমার বয়স এখন ৩৬। আমাদের দাম্পত্য জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। রায়িদও তার আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বলা যায়, কলেজ জীবনে চলে গেছে। আমার খুব খেয়াল রাখে সে। সে নিজেই বলেছে আমাকে বাড়ি থেকে ছোট খাটো একটা বিজনেস করতে। যাতে আমার সময় কাটে। আমি বাড়ি থেকেই কেকের অর্ডার নিই। রায়িদ এখন প্রায়ই আমাকে, লাবিবা ও জাবিরকে নিয়ে ঘুরতে যায়। আমরা সত্যিই আমাদের জীবনটাকে আবার নতুন করে ফিরে পেয়েছি।




এই বইটি কিনতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন



আপনি কি মতিঝিলে হোটেল খুঁজছেন? তাহলে এই লিংকে ক্লিক করে এই হোটেলটি বুক করতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আমি ভেবেছিলাম সে আমাকে ভালবাসে

  আমার নাম সাদিকা। আমি আমার গল্পটা সবাইকে বলতে চাই। এটা মূলত একটা ভালবাসা , ভুল আর আশার গল্প। আমি খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। আমি বেশি কথা বলি...